ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই চুলের সৌন্দর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, স্বাস্থ্যবান সুন্দর চুল শুধু সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না; বরং ব্যক্তিত্বের উপরও প্রভাব ফেলে। ইসলামে রয়েছে চুল পরিপাটি রাখার বিভিন্ন পদ্ধতি।
ইসলামে জন্ম পরবর্তী শিশুদের ক্ষেত্রে চুল ন্যাড়া করার বিধান প্রমাণিত [তিরিমিজী, আল-সুনান, ১৫২২]। চুল ন্যাড়া বলতে 'হালক' পদ্ধতি বুঝায়, যার অর্থ মাথার সমস্ত চুল ফেলে দেয়া। তবে শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে আরবে ‘কাজা’ নামক একটি পদ্ধতি প্রচলিত ছিলো, তা একেবারে নিষিদ্ধ করা হয় [আবূ দাউদ, আস-সুনান, ৪১৪৭]। এটা হচ্ছে, মাথার কিছু অংশ মুন্ডন করা ও কিছু অংশ রেখে দেয়া। কপালের ওপরে কিছু চুল রেখে মাথার দু’পাশে চুল ফেলে দেয়া [বুখারী, আস-সহীহ, ৫৯২১]। ফলে বর্তমানে শর্ট কাট বা আন্ডার কাট, ক্লাসিক কাট, ফেড কাট, ক্রু কাট, বাজ কাট, লেয়ার স্পাইক, ইমো সুইপ ইত্যাদি সব-ই নিষিদ্ধ। হজ্জ ও উমরা পালনকারীর জন্য হালক কিংবা কসর দুই পদ্ধতির যে কোনো একটি করা আবশ্যক [আল-কুরআন, ২৭]।
চুল কাটা-রাখার ক্ষেত্রে একটি নিয়ম কানের লতি পর্যন্ত চুল রাখা, হাদীসের তাকে ‘ওয়াফরা’ [আবূ দাউদ, আস-সুনান, ৪১৮৫] বলা হয়েছে। আরেকটি ‘লিম্মা’ পদ্ধতি তথা ঘাড় ও কানের লতির মাঝামাঝি পর্যন্ত চুল রাখা [আবূ দাউদ, আস-সুনান, ৪১৮৭]। আরেকটি পদ্ধতির নাম ‘জুম্মা’ তথা ঘাড় পর্যন্ত চুল রাখা [আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪১৮৩]। এ তিনটি পদ্ধতি আমাদের বাবরি পদ্ধতির সাদৃশ্যপূর্ণ। নবীজি (সা.) এ পদ্ধতিতে চুল রাখতেন-কাটতেন।
নবীজির (সা.) চুল মধ্যম প্রকৃতির ছিল; খুব কোঁকড়ানো নয়, আবার একেবারে সোজাও নয়। তা ছিলো দুই কাঁধ ও দুই কানের মাঝ বরাবর [মুসলিম, আস-সহীহ, ২৩৩৮]। তাঁর মাথার চুল দুই কানের অর্ধেক পর্যন্ত [মুসলিম, আস-সহীহ, ২৩৩৯] কিংবা লতি পর্যন্ত [আবূ দাউদ, আস-সুনান, ৪০৭২] বা দুই কাঁধের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঝুলে থাকতো [বুখারী, আস-সহীহ, ৫৯০৩]। নবীজি (সা.) যেমন চুল ঝুলিয়ে রাখতেন, তেমনি মাথার দুই পাশের মাঝ বরাবর সিঁথিও কাটাতেন। সিঁথে কাটা ছিলো আরব মুশরিকদের পদ্ধতি আর ঝুলিয়ে রাখা ছিলো আহলু কিতাব ইহুদিদের পদ্ধতি। ইবন আব্বাসের (রা.) উপলব্ধি এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে নবীজিকে (সা.) কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে তিনি দু’টি পদ্ধতি-ই অনুসরণ করেছিলেন [বুখারী, আস-সহীহ, ৫৪৯২]। তিনি কখনো কলপ দেননি; তাঁর নিম্ন ঠোঁটের নীচের ছোট দাঁড়িতে এবং কানপট্টিতে আর মাথার মাঝে কিছু সাদা চুল ছিলো [মুসলিম, আস-সহীহ, ২৩৪১]।
নারীদের ক্ষেত্রে হলক পদ্ধতি ইসলামে নিষিদ্ধ [নাসাঈ, আস-সুনান, ৫০৪৮]। হজ্জ ও উমরায় নারীদের ক্ষেত্রে হালক নেই; তারা শুধু কসর পদ্ধতি অনুসরণ করবে [আবূ দাউদ, আস-সুনান, ১৯৮৫]। তাদের সমগ্র মাথার চুল একত্রে ধরে এক আঙুল পরিমাণ কাটতে হবে [সাইয়িদ সাবিক, ফিকহুস্সুন্নাহ , খ. ১, পৃ. ৭৪৩]। নারীরা একমাত্র স্বামীর জন্য সজ্জিত ও পরিপাটি করে তুলবার জন্য চুল ছোট করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে নবীজির স্ত্রীদের থেকে ‘ওয়াফরা’ পদ্ধতির সদৃশ হওয়া প্রমাণিত হয়েছে [মুসলিম, আস-সহীহ, ৩২০]। কারো মতে, ওয়াফরা পদ্ধতিতে চুল কাঁধের একটু নীচে থাকে। কারো কারো মতে, চুল কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছায়।
আমাদের পুরুষদের উচিত এ ক্ষেত্রে আমাদের নবীজিকে (সা.) আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা এবং আমাদের নারীদের উচিত এ ক্ষেত্রে আমাদের আম্মাজানদেরকে (রা.) আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সময় জার্নাল/আরইউ